শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে অনন্য উদ্যোগ ইউএনও সোহেল রানার - পদ্মা নিউজ ২৩

জিএম কিবরিয়া: 

মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণে প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণ করেছেন দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও সোহেল রানা। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগে সাধারণ মানুষেরা সাধুবাদ জানিয়েছেন। 


১৯৭১ সালে পাকিস্তানি দখলদারি বাহিনীর বিরুদ্ধে বীর বাঙ্গালি রণাঙ্গনে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে প্রিয় ভূ-খন্ডকে  স্বাধীন করেন। নয় মাসের তীব্র লড়াইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়।  ৩ লক্ষ মা বোন তাদের ইজ্জত হারায়। সারাদেশে পাক হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুরতার  ধারাবাহিকতায় দুর্গাপুর উপজেলা ঘটেছিলো জঘন্য বিশ্বাসঘাতকতা ও গনহত্যা। দিনটি ছিল ১৯৭১ সালের ১৬ মে প্রামাণ্য চিত্রে  অশ্রুসিক্ত নয়নে হৃদয় -বিদারক  ঘটনার বিবরণী দিচ্ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা পরমেশ চন্দ্র তিনি বললেন , আমরা প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নেওয়ার জন্য পরিবারের সকলেই পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছি সন্ধ্যা নামলেই রওনা দিবো। হঠাৎ খবর এলো কাউকে ভারত যেতে হবেনা হিন্দু - মুসলিম মিটিং করে শান্তিপূর্ণ সহ- অবস্থান নিশ্চিত করা হবে। আমরা ছোট ছিলাম বাবা আমাদের রেখে যুগিশো স্কুলের মাঠে মিটিং এ গেলেন আমার দুর থেকে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছিলাম। মাঠে সকলকে হিন্দু মুসলিম আলাদা আলাদা হয়ে দাড়াতে বললেন  পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তৎপর শুরু হলো পাশবিক নির্যাতন বেয়োনেট খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ব্রাশফায়ার করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হলো। লাশের সাথে এমন নির্মমতা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। পরিবারের বাকি সদস্যরা ভারত যাওয়ার জন্য তৈরী হলো। আমি বল্লাম পিতা  হত্যার প্রতিশোধ নিবো এদেশকে স্বাধীন করবো। ট্রেনিং নিয়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে দেশকে শত্রু মুক্ত করলাম।

 রণাঙ্গনের আরেক মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দীন বলেন, 

পূর্ব থেকে আমাদের আনসারের ট্রেনিং নেওয়া ছিল। দুর্গাপুর থানায় তৎক্ষণাৎ ডাকলেন জরুরি ভাবে আমাদের ডাকলেন। সকল নির্দেশনা প্রদান করলেন চারঘাট থেকে আনা অস্ত্র প্রদান করলেন। রাজশাহীতে অবস্থিত খান সেনাদের ক্যাম্প আক্রমণ করার জন্য আমরা রওনা হইলাম। পজিশন নিয়ে আক্রমণের জন্য অপেক্ষায়  প্রহর গুনছিলাম। 


ইউএনও সোহেল রানা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের একত্রিত করতে প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ভোটের মাধ্যমে “দুর্গাপুর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড ” সংগঠন তৈরী করেন। ওই সংগঠনে নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দিপক চন্দ্র কবিরাজ জানান, ইউএনও সাহেব মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের নিয়ে নানান যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন যা ইতিপূর্বে কেউ নেয়নি। এমন মানবিক অফিসার প্রতিটি উপজেলায় থাকলে নতুন প্রজন্ম দেশপ্রেমিক স্বাধীনতার সপক্ষে তৈরী হবে। 


এবিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও সোহেল রানা জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমারা স্বাধীন ভূখন্ড পেয়েছি। লক্ষ শহীদের  আত্মত্যাগ দেশপ্রেমের সোনালী অতীত। আমাদের বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবন বাজি রেখে দেশকে স্বাধীন করতে মহান  যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। তাদের  আত্মত্যাগ বীরত্বের স্মৃতি নতুন প্রজন্মের  সন্তানদের দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ করবে। আস্তে আস্তে আমাদের মধ্যে থেকে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সাথে তাদের অনেক স্মৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। তাই প্রামান্য চিত্রের মাধ্যমে তাদের স্মৃতি সংরক্ষণ করে আগামী প্রজন্মের সন্তানদের দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ করতে এই সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিয়েছি।

  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন